শফিউল আলম রাজীব
এক সময়ের সুস্থ্য সবল দেহের অধিকারী যুবক সোহেল রানা(৩৫) বর্তমানে বিকলাঙ্গ হয়ে ৪ বছর যাবৎ পড়ে আছেন বিছানায়। অভাবের সংসারে পরিবারের কাছে হয়েছেন বোঝা। তবে সন্তানদের জন্য বাঁচার আকুতি সোহেলের।
সোহেল তার ক্ষুদ্র সুস্থ জীবনের ৫ বছর ছিলেন প্রবাসে, প্রবাস শেষে সাংসারিক জীবনের পথচলা শুরু। হঠাৎ পিঠে ব্যাথা, সেই ব্যাথা যেন কাল হয়ে দাঁড়ায় সোহেলর জীবনে। সুস্থতার আশায় মেরুদন্ডে অস্ত্রপ্রচার করে একেবারেই বিকলাঙ্গ হয়ে এক বিছানায়ই ৪ বছর চলে গেল তার। এখন সে বিছানায় শুয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ঈদের পর ঈদ যায় আসে কিন্তু ঈদের আনন্দ ফিরেনা তার পরিবারে। বিকলাঙ্গ সোহেল রানা(৩৫) কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার হাপুড়খাড়া গ্রামের (মধ্যপাড়ার) মৃত: সাহাজ উদ্দিনের পুত্র।
বৃহস্পতিবার (১২) জুন সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আবদ্ধ একটি কক্ষে শুয়ে আছে সোহেল। তার সাথে কথা বললে সে নিজের অসুস্থ শরীর নিয়ে পরিবারের অস্বচ্ছলতার কথা এবং রিবারটির কষ্টে চলার বিবরণ তুলে ধরেন। সে নিজের বিকলাঙ্গ জীবনের চিকিৎসা ব্যাবস্থাসহ সবকিছু নিয়ে খুব বিষন্নতায় ভুগছেন। স্ত্রী, মা, দুই সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে অতিবাহিত হচ্ছে তার সংসার জীবন।
সোহেল আরো জানান, ৫ বছর প্রবাস জীবন শেষে দেশে আসার কিছুদিন পর ২০২১ সালে থেকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসক জানান, মেরুদন্ডের হাড়ে পানি জমেছে, তাই ব্যাথা হয়। চিকিৎসা করেও কোনোরকম উন্নতি হয়নি বরং ক্ষতিই হয়েছে। দু’টি অপারেশনের পূর্বে ব্যাথা নিয়ে চলাফেরা করতে পারলেও, অপারেশনের পর দুটো হাত ও মাথা ছাড়া শরীরের বাকি অংশ দেহে আছে কিনা কিছুই বলতে পারছে না। অভাব অনটনের সংসারে চিকিৎসা তো দুরের কথা এখন খেয়ে বেঁচে থাকাটাও অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে বড় চিন্তায় আছি। বিত্তবানরা দয়াকরে আমার চিকিৎসায় পাশে দাড়ান। আমি সন্তানদের জন্য বাঁচতে চাই।
সোহেল’র মা’ রাবেয়া বেগম (৫৮) জানান, আমার হতভাগ্য, সুস্থ ছেলেটি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ৪ বছর যাবৎ আজ বিছানায় পরে আছে। তার চিকিৎসা করাতে নিজের সহায় সম্পত্তি, স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি, ধার-দেনা, ব্যাংক ঋণ করেও সুস্থ করতে পারিনি। পুত্রের পিঠের ব্যাথার চিকিৎসা করাতে ঢাকার একটি হাসপাতালে অপারেশন করাই। কিন্তু পুত্র আমার সুস্থ্য তো হলোই না, উল্টো বুকের নিচ থেকে বামপাশ পুরোটাই প্যারালাইসিস রোগীর মত পুরো দেহটা অবস হয়ে গেছে। দ্বিতীয় বার আবারো অপারেশন করা হলে বুকের নিচ থেকে অপরপাশ (ডান পাশ) পুরুটা অবস হয়ে যায়। টাকার অভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারছি না। এক বিছানায় ৪ টি বছর শুয়ে কাটাতে হচ্ছে তার। মা হয়ে ছেলের এমন করুন পরিণতি মেনে নিতে পারছি না। অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি বলেন দুটো হাত ও মাথা ছাড়া শরীরের বাকি অংশ তার দেহে আছে কিনা কিছু বলতে পারেনা সে।
সোহেলের স্ত্রী নাজমা আক্তার (২৭) জানান, আমার স্বামীর এমন কষ্ট সহ্য করতে কষ্ট হয়। অভাবের সংসারে ঈদ কেটেছে কোন রকম। সে হাঁটতে ও বসতে পারে না। স্বামী বেঁচে থেকেও মৃত মানুষের মত বিছানায় পড়ে রয়েছে। কথা বলতে পারে, হাতও নাড়তে পারে। ক্ষিধাও অনুভব হয়না তার, শরীরের বাকি অবস অংশে ব্যাথা বা কোনরকম অনুভূতি নেই।
স্থানীয় জামাল মুন্সি বলেন, গ্রামবাসীরা সোহেলকে সাহায্য সহযোগিতা করছেন, তবে তা পর্যাপ্ত নয়। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অসহায় এ পরিবারটির পাশে দেশের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
এরোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমম্পেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মো. ইব্রাহীম হোসেন জানান, মেরুদন্ডের সমস্যাজনিত কারনে এ সমস্যা হতে পারে, রোগির হিস্ট্রি না জানলে সঠিক মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তবে তার অনুভুতীর নার্বগুলো বিকল হলেও খাদ্যনালীর নার্বগুলো মস্তিষ্কের সাথে সচল রয়েছে। উন্নত চিকিৎসা করালে সুস্থ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
